করোনা মহামারির কারণে দেশের সব সিনেমা হলই বন্ধ। কবে খুলবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স আর কখনো খুলবে না। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও চেইন মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্সের এই হলটি চিরদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া-বিপণন বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বেদনাদায়ক হলেও ঘটনাটি সত্যি। বসুন্ধরা সিটিতে আর স্টার সিনেপ্লেক্স থাকছে না। কারণ বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের কর্তৃপক্ষ আমাদের নোটিশ দিয়েছে সিনেপ্লেক্স বন্ধ করার জন্য। অক্টোবর ২০২০ সাল পর্যন্ত চুক্তি ছিল আমাদের। এবার সেটি আর নবায়ন হচ্ছে না। মার্কেট কর্তৃপক্ষের নতুন পরিকল্পনা রয়েছে শপিংমল নিয়ে। এখন বাড়িওয়ালা যদি নোটিশ দেন চলে যাওয়ার জন্য তাহলে ভাড়াটিয়ার কিছু করার থাকে না।’
২০০৪ সালে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম ডিজিটাল এবং অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত এই সিনেমা হলটি। এটি সারা দেশের সিনেমাপ্রেমীদের ভালোবাসা কুড়িয়েছিল। ১৬ বছর ধরে বসুন্ধরায় এই সিনেপ্লেক্স সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করেছে। বিশেষভাবে হলিউডের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আন্তর্জাতিক মুক্তির দিন অনেক বড় বাজেটের ছবি তারা মুক্তি দিয়েছে। এজন্য হলিউডপ্রেমী দর্শকের কাছে খুবই প্রিয় ছিল স্টার সিনেপ্লেক্স।
এই শাখাটি অন্য কোথাও স্থানান্তর হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, করোনার কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। তাই সব রকম যন্ত্রপাতি আমরা আমাদের গোডাউনে রেখে দিব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আলোচনা করে অন্য কোথাও শাখা খুললে সেখানে হয়তো এগুলো ব্যবহার করা হবে।’
স্টার সিনেপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে পরবর্তী সময়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এই প্রতিষ্ঠানের আরও ৯টি হল স্থাপিত হয়। তাদের অন্য মাল্টিপ্লেক্সগুলোর মধ্যে রয়েছে জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার ও মহাখালীর এসকে টাওয়ার-এ। আরেকটি মাল্টিপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে মিরপুর সনি সিনেমা হলকে ঘিরে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে ষোলশহর ফিনলে স্কয়ার শপিংমলের সপ্তম তলায় ‘সিলভার স্ক্রিন’ নামেও একটি শাখা চালু আছে স্টার সিনেপ্লেক্সের। শিগগিরই দেশের আরও বেশ কিছু জেলা শহরে শাখা চালুর কথাও ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে, ১২ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলন করে সরকার সহায়তা চেয়েছিলেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল। প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি সরকারের কাছে ৫টিসহ মোট ৭টি দাবি তুলে ধরেছিলেন। যেগুলো পূরণ হলে স্টার সিনেপ্লেক্স এদেশে সিনেমা থিয়েটারের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে। সেগুলো হলো-
১. নগরবাসীর বিনোদনের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনতিবিলম্বে সিনেমা হলসমূহ খুলে দেওয়া।
২. জরুরি আর্থিক সহায়তা কিংবা প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা।
৩. সিনেমা হলের টিকিটের ওপর সব ধরনের মূসক ও কর মওকুফের সুযোগ প্রদান।
৪. সুদবিহীন ঋণ প্রদানের অনুমোদন।
৫. উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্রসমূহ শর্তহীন ভাবে আমদানির অনুমতি প্রদান। এছাড়াও দুটি দাবি তিনি উপস্থাপন করেছেন- স্টার সিনেপ্লেক্স আছে এমন তিনটি শপিংমল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির কাছে।
শপিংমল কর্তৃপক্ষের কাছে রুহেল বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতে স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রতিটি শাখা বিভিন্ন শপিংমলে ভাড়ায় পরিচালিত হয়। এই করোনাকালীন সময়ে শপিংমল কর্তৃপক্ষের কাছে ভাড়া মওকুফ করা ও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার অনুরোধ করছি।
প্রযোজক সমিতির কাছে অনুরোধ করে বলেন, সেন্সর পাওয়া সিনেমাগুলো মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সিনেমা হল খুললেই হবে না নতুন ছবি মুক্তি না পেলে দর্শক হলে আসবে না।
Leave a Reply